হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা এবং হার্ট ভালো রাখার জন্য কি কি খেতে হবে?

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা এবং

বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়, অথচ এর অনেকগুলোই প্রতিরোধযোগ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ মারা যায় হৃদ্‌রোগে, যার অর্ধেকের বেশি মৃত্যু ঘটে হার্ট অ্যাটাকের কারণে। এমন মরণব্যাধির নাম শুনলেই অনেকের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়, কিন্তু সচেতনতা আর সঠিক লাইফস্টাইল মেনে চললে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা সম্ভব এবং সুস্থ জীবনযাপনও করা যায়। হার্ট অ্যাটাক হলে মানুষ সময়ের সাথে যুদ্ধ করে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে প্রতিটি সেকেন্ড প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। 

আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিশ্বের ৭০% হার্ট অ্যাটাক রোগী জানেই না কীভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হয় বা কীভাবে ঝুঁকি কমাতে হয়। অথচ প্রাথমিক ধাপে কিছু ওষুধ, সিপিআর (CPR), এবং দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোই বাঁচাতে পারে একটি প্রাণ। পাশাপাশি, হার্ট ভালো রাখতে কিছু নির্দিষ্ট খাবার যেমন ওটস, বাদাম, জলপাই তেল, এবং সবুজ শাকসবজি নিয়মিত খাওয়া জরুরি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে জানতে হবে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ নিয়ে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা কী বলছে।

হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ চেনা কেন জরুরি

হার্ট অ্যাটাক অনেক সময় হঠাৎ করে ঘটে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছু আগাম লক্ষণ দেখা দেয়- যদি কেউ তা ঠিকভাবে বুঝতে পারে, তবে সময়মতো চিকিৎসা নিয়ে জীবন বাঁচানো সম্ভব। অনেকেই এসব লক্ষণকে হালকা সমস্যা মনে করে অবহেলা করেন, যার পরিণতি হতে পারে মারাত্মক। প্রাথমিক লক্ষণগুলো চেনা মানে হলো মৃত্যুর আগে সম্ভাব্য শেষ সুযোগটিকে কাজে লাগানো। সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো বুকের মাঝখানে চাপ চাপ ব্যথা, যা কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে বা কমে গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারে। এই ব্যথা অনেক সময় বুক চেপে ধরা, জ্বালাপোড়া বা ভারি বস্তু চাপা পড়ে থাকার মতো অনুভূত হয়। এ ছাড়া এক বা দুই হাতে, বিশেষ করে বাম হাতে, ব্যথা ছড়িয়ে যেতে পারে- যেটা ঘাড়, চোয়াল বা পিঠেও অনুভূত হতে পারে।

অপ্রচলিত লক্ষণগুলোও চিনে রাখা দরকার

সবসময় বুক ব্যথা হয় না- বিশেষ করে মহিলা, ডায়াবেটিস রোগী ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো ভিন্ন হতে পারে। যেমন: হঠাৎ অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা আসলেই বমি হওয়া, অস্বাভাবিক ক্লান্তিভাব- এসবও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের আগাম সংকেত। অনেক সময় রোগীরা বলেন, “মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক হচ্ছে না”- এই ধরণের অস্পষ্ট অস্বস্তিও গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ এতটাই হালকা হয় যে রোগী বুঝতেই পারেন না তিনি একটি ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’-এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তাই নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং অসাধারণ কোনো শারীরিক অনুভূতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া সবচেয়ে নিরাপদ পদক্ষেপ।

প্রথম ৩০ মিনিট: জীবন বাঁচানোর সবচেয়ে মূল্যবান সময়

হার্ট অ্যাটাকের সময় প্রথম ৩০ মিনিটকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় “গোল্ডেন হাফ আওয়ার”, কারণ এই সময়ের প্রতিটি মিনিট রোগীর জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান নির্ধারণ করে দিতে পারে। হার্টে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে প্রতিমিনিটে হার্টের কোষ অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে থাকে- একবার যদি কোষগুলো স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই এই প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যেই রোগীকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া, প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া, অথবা ইসিজি করিয়ে হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। যত দ্রুত ব্লকেজ খোলা সম্ভব হবে, তত বেশি হার্টের পেশি রক্ষা করা যাবে এবং রোগীর জীবন বাঁচার সম্ভাবনা বাড়বে।

অনেক সময় রোগী বা পরিবারের সদস্যরা ভাবেন, “এই ব্যথা তো একটু পর ঠিক হয়ে যাবে”, বা “গ্যাসের সমস্যা হতে পারে”- এই ধরণের সিদ্ধান্তমূলক বিলম্বই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। চিকিৎসা গবেষণায় দেখা গেছে, যারা লক্ষণ শুরু হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছান, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি, অথচ যারা ২ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় নেন, তাদের মধ্যে মারাত্মক জটিলতা বা মৃত্যু হার অনেক বেশি। তাই নিজের শরীরের সংকেত বুঝে সময় নষ্ট না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ভুল হলেও ক্ষতি নেই, কিন্তু দেরি করলে হার্টের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। মনে রাখতে হবে- প্রথম ৩০ মিনিটই সবচেয়ে বড় অস্ত্র, যেখানে সময় মানেই জীবন।

ব্যবহৃত ওষুধ ও থেরাপি: অ্যাসপিরিন, নাইট্রোগ্লিসারিন এবং আরও

হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত সবচেয়ে পরিচিত ও কার্যকর ওষুধ হলো অ্যাসপিরিন। এটি রক্ত পাতলা করে এবং রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে, যা হার্ট অ্যাটাকের সময় রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। রোগী যদি সচেতন থাকে এবং শ্বাস নিচ্ছে, তাহলে একটি ৩০০ মি.গ্রা. অ্যাসপিরিন চিবিয়ে খাওয়ানোর নির্দেশনা থাকে, যাতে দ্রুত কাজ শুরু করে। অনেক সময় এম্বুলেন্স বা হাসপাতালে যাওয়ার আগেই এটি খাওয়া রোগীর প্রাণ বাঁচাতে পারে। পাশাপাশি, নাইট্রোগ্লিসারিন নামক ওষুধটি হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকের ব্যথা কমাতে দ্রুত কাজ করে। এটি রক্তনালিকে প্রশস্ত করে রক্ত চলাচল সহজ করে তোলে। বেশিরভাগ সময় এই ওষুধ জিহ্বার নিচে রাখা হয় যেন দ্রুত রক্তে মিশে কাজ করতে পারে। তবে সব রোগীর জন্য নাইট্রোগ্লিসারিন উপযোগী নয়, তাই এটি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের নির্দেশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হার্ট অ্যাটাকের পরবর্তী ধাপে থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি ও এনজিওপ্লাস্টি অন্যতম আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। থ্রম্বোলাইটিক ওষুধ, যেমন স্ট্রেপ্টোকিনেজ বা টিসিপিএ (tPA), রক্তনালীতে জমে থাকা ক্লট ভেঙে দেয়, যা হার্টে রক্তপ্রবাহ পুনরায় চালু করতে সাহায্য করে। তবে এই থেরাপির কার্যকারিতা সময়ের ওপর নির্ভর করে- হার্ট অ্যাটাকের প্রথম ৬ ঘণ্টার মধ্যেই এটি দিতে হয়। এর বাইরে, ইমার্জেন্সি করোনারি এনজিওপ্লাস্টি (PCI) পদ্ধতিতে ব্লকেজ থাকা ধমনীতে একটি বেলুন ঢুকিয়ে সেটি ফোলানো হয় এবং সেখানে একটি স্টেন্ট বসানো হয়, যা ধমনী খোলা রাখতে সহায়তা করে। এই চিকিৎসা প্রক্রিয়াগুলো উন্নত হাসপাতালে করা হয়ে থাকে এবং একে “লাইফ-সেভিং ইন্টারভেনশন” হিসেবেও ধরা হয়। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসক হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা ঠিক রাখতে বেটা-ব্লকার, এসিই ইনহিবিটর এবং স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধও দেন, যা রোগীকে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।

হার্ট ভালো রাখার জন্য খাওয়ার তালিকায় যা রাখবেন

হার্ট ভালো রাখার জন্য প্রথমেই নজর দিতে হবে চর্বি এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে। খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট (যেমন- ঘি, মাখন, লাল মাংস) বেশি থাকলে রক্তনালিতে প্লাক জমে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ে। তাই এর পরিবর্তে মনোস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ব্যবহার করা উচিত, যেমন- জলপাই তেল (olive oil), সানফ্লাওয়ার তেল এবং বাদামে থাকা প্রাকৃতিক ফ্যাট। এই তেলগুলো হার্ট-সুরক্ষার জন্য উপকারী বলে গবেষণায় প্রমাণিত। এছাড়া সপ্তাহে অন্তত ২ দিন সামুদ্রিক মাছ (যেমন- স্যামন, সারডিন) খাওয়া উচিত, কারণ এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ওটস, ব্রাউন ব্রেড, ব্রাউন রাইস, এবং শস্যজাতীয় খাবার রাখা উচিত। এগুলো শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া, সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, ঢেঁড়শ, কচু শাক ইত্যাদিতে থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন K, যা রক্তনালিকে স্বাস্থ্যবান রাখে। শাকসবজি কেবল হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ করে না, বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রতিদিন অন্তত পাঁচ রকম ফল বা সবজি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে- বিশেষত বেগুনি, লাল ও কমলা রঙের ফলমূল বেশি কার্যকর।

হার্ট ভালো রাখতে চিনির পরিমাণ কমানো এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলাও জরুরি। বাজারের অনেক খাবার যেমন সফট ড্রিংকস, প্যাকেটজাত বিস্কুট বা ফাস্টফুডে অতিরিক্ত সোডিয়াম ও ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া অতিরিক্ত লবণ খাওয়া উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা পরোক্ষভাবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই খাবারে প্রাকৃতিক স্বাদ বজায় রাখতে ভেষজ মসলা (যেমন- আদা, রসুন, হলুদ) ব্যবহার করা যেতে পারে। রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন নামক উপাদান, যা রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান এবং দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাচলা হার্ট সুস্থ রাখতে দারুণভাবে কার্যকর।

হার্টবান্ধব খাবারের তালিকা এক নজরে

  • ওটস, ব্রাউন রাইস, ও ব্রাউন ব্রেড
  • জলপাই তেল, সানফ্লাওয়ার তেল, বাদাম
  • সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, সারডিন)
  • সবুজ শাকসবজি ও বর্ণিল ফলমূল
  • রসুন, আদা, হলুদসহ ভেষজ মসলা
  • পর্যাপ্ত পানি ও চিনি-লবণ নিয়ন্ত্রিত খাবার

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে ঘরোয়া টিপস ও লাইফস্টাইল গাইড

প্রতিদিনের ব্যায়াম ও মেডিটেশনের ভূমিকা

শরীরচর্চা শুধু ওজন কমানোর জন্য নয়, বরং হার্ট সুস্থ রাখার জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকর অভ্যাস। নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, সাঁতার বা যোগব্যায়াম করলে শরীরের রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ৩০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ব্যায়াম রক্তনালিকে নমনীয় রাখে এবং রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ উন্নত করে। এটি হৃৎপিণ্ডকে আরও শক্তিশালী করে তোলে, ফলে রক্ত পাম্প করতে সহজ হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে।

মেডিটেশন বা ধ্যান মানসিক প্রশান্তি এনে শরীরের ওপর অসাধারণ প্রভাব ফেলে। নিয়মিত ধ্যান করলে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে হৃদ্‌স্বাস্থ্যের ওপর। অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা প্রতিদিন অন্তত ১০–১৫ মিনিট ধ্যান করেন, তাদের রক্তচাপ ও হার্ট রেট অনেকটাই স্থিতিশীল থাকে। মেডিটেশন মনকে শান্ত করে এবং দেহের প্রতিটি কোষে স্বস্তি নিয়ে আসে, যা হার্টের জন্য এক ধরনের প্রাকৃতিক থেরাপি হিসেবে কাজ করে। তাই দৈনন্দিন জীবনে ধ্যান ও ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলাই হতে পারে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে প্রথম পদক্ষেপ।

মানসিক চাপ কমানোর উপায়

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস হার্ট অ্যাটাকের নীরব ঘাতক। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে শরীরে অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল হরমোন নিঃসরণ বাড়ে, যা রক্তচাপ ও হার্টরেট বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘদিন মানসিক চাপ থাকলে তা রক্তনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা প্লাক জমে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। অফিসের কাজের চাপ, পারিবারিক সমস্যা, আর্থিক অনিশ্চয়তা- এসব বিষয় যদি আমরা ঠিকভাবে সামাল না দিই, তাহলে তা ধীরে ধীরে শরীরের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

তবে মানসিক চাপ কমানোর কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় রয়েছে। প্রথমত, প্রতিদিনের রুটিনে “নিজের জন্য সময়” রাখা খুব জরুরি। এতে হোক বই পড়া, গান শোনা, অথবা প্রিয় কোনো কাজ করা- এই ‘মি-টাইম’ মনকে হালকা করে তোলে। দ্বিতীয়ত, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন (breathing exercise) ও ধ্যান মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তৃতীয়ত, ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সাথে খোলামেলা কথা বললে মানসিক চাপ দ্রুত কমে। এছাড়া ডায়েটেও কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে, যেমন- চা-কফির বদলে হালকা গ্রিন টি পান, যা মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করে।

পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা

ঘুম আমাদের শরীরের রিসেট বাটনের মতো। একটানা পরিশ্রম করার পর শরীর এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের ঘাটতি হলে শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, উচ্চ রক্তচাপ, ও প্রদাহ সৃষ্টি হয়- যা সবকিছু মিলিয়ে হার্ট অ্যাটাকের জন্য একটি বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কম ঘুমান বা বারবার জেগে ওঠেন, তাদের হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়। ঘুম না হলে হৃদ্‌পিণ্ড তার স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারে না।

শুধু ঘুমালেই হবে না, ঘুমের গুণগত মান নিশ্চিত করাও জরুরি। ঘুমের সময় ফোন বা স্ক্রিন ব্যবহার একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ এগুলো ঘুমের হরমোন (মেলাটোনিন) নিঃসরণে বাধা দেয়। ঘুমানোর আগে হালকা গরম দুধ পান, মৃদু আলো এবং নিরিবিলি পরিবেশ ঘুমের জন্য উপযোগী করে তোলে। এছাড়া দিনে একটু বিশ্রাম বা ‘পাওয়ার ন্যাপ’ নিলে শরীর সতেজ হয় এবং মানসিক চাপ কমে। তাই হার্ট ভালো রাখতে রাতের ঘুম ও দিনের কিছুটা বিশ্রাম- দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

আমরা যখন নিজেদের শরীরের প্রতি অবহেলা করি, তখন হার্ট অ্যাটাক আমাদের নিঃশব্দ ঘাতকের মতো আক্রমণ করে। কিন্তু সচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসা, এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণই পারে এই বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে। তাই এখনই সময় নিজেদের ও প্রিয়জনদের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবার। মনে রাখবেন, একমাত্র আপনি নিজেই আপনার হার্টের সেরা চিকিৎসক হতে পারেন- আপনার প্রতিদিনের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আপনার আগামীকাল।

Related posts

Leave a Comment